March 29, 2024 | 4:00 AM

করোনাকালে বেশিরভাগ সময় মাস্ক পড়ে থাকতে হয়। মাস্ক খুললেও মুখের দুর্গন্ধ বা দুর্গন্ধযুক্ত শ্বাস অনেক সময়ই বিরক্তিকর সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। কেউ কেউ হয়তো এমন অবস্থা সম্পর্কে খুব একটা অবগত থাকেন না। অথচ মুখে গন্ধ তৈরি হয়, যা অ্যালকোহলমুক্ত প্রাকৃতিক উপায়ে দূর করা সম্ভব। বিভিন্ন কারণে এই ধরনের সমস্যা হতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মুখের ভেতরে কলোনি তৈরি করে কিছু ব্যাকটেরিয়া। এগুলো যখনই সুযোগ পায় ক্ষতি করে দাঁতের, সেই সঙ্গে মুখে গন্ধ সৃষ্টি করে।

অনেক সময়ে কী খাচ্ছেন, তার উপরেই নির্ভর করে মুখ থেকে কেমন গন্ধ বেরোবে। পেঁয়াজ, রসুন, চিজ, সোডা, কমলা লেবুর রস খেলে বা মদ্যপান করলে মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে। এই ধরনের সমস্যা সাময়িক। মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করলে বা চুইয়িং গাম খেলে অনেকটাই ঢেকে যায় গন্ধ। শরীর থেকে খাবারগুলো পুরোপুরি বেরিয়ে গেলে গন্ধও চলে যাবে।

তবে মুখের দুর্গন্ধ যদি নিয়মিত সমস্যা হয়ে থাকে, তা হলে সেটা শরীরে অন্য সমস্যাও হতে পারে। জেনে নিন সেগুলো কী।

মুখের লালারস সব রকম জীবাণু মুছে ফেলার ক্ষেত্রে খুবই জরুরি। তাই মুখ শুকিয়ে গেলে দুর্গন্ধ হতে বাধ্য। অ্যাসিডিটি, কোষ্ঠকাঠিন্য বা অন্য যে কোনও হজমের সমস্যা হলেও মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে।

সিগারেট শুধু স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকরই নয়, মুখের দুর্গন্ধের জন্যেও দায়ী। ঠিক মতো দাঁত না মাজা বা ফ্লস না করলেও জীবাণু তৈরি হয় মুখে। তাতে দুর্গন্ধ হয় সহজেই।

কফি বা যে কোনও ধরনের অ্যালকোহলের মতো পানীয়ের স্বাদ মুখে অনেক ক্ষণ থেকে যায়। তা থেকেই দুর্গন্ধ তৈরি হয়। এই জাতীয় ক়ড়া পানীয় মুখে লালারস তৈরির ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। সেই থেকেই মুখের দুর্গন্ধ।

মুখের দুর্গন্ধ দূর করবেন যেভাবে

লবঙ্গতে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল প্রোপাটিজ, যা মুখে গন্ধ তৈরি করা ব্যাকটেরিয়াদের মেরে ফেলে। মুখে একটি লবঙ্গ নিয়ে চুসতে থাকুন। দেখবেন গন্ধ একেবারে চলে গেছে।

হালকা গরম জলতে লেবুর রস মিশিয়ে নিন। সেই জল মুখ কুলকুচি করুন দিনে দুইবার। রাতে ঘুমনোর আগে এবং সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর। তাতে মুখে দুর্গন্ধের সমস্যা অনেকটাই কমবে।

নারিকেল তেলে উপস্থিত অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান নিমিষে গন্ধ সৃষ্টি করা ব্যাকটেরিয়াদের মেরে ফেলে। ফলে মুখের গন্ধ দূর হতে সময় লাগে না। এক্ষেত্রে এক চামুচ নারিকেল তেল মুখে নিয়ে ভালো করে কুলি করুন। কম করে ৫ মিনিট করতে হবে। তার পর হালকা গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে মুখটা।

মৌরি বা জিরা একটু ভেজে রাখুন। দুপুরের খাওয়া বা রাতের খাওয়ার পর একটুখানি মৌরি বা জিরা চিবিয়ে নিলেও মুখের দুর্গন্ধ অনেকটাই দূর হবে।

গাজর, পালং শাক এবং শসা দিয়ে মিক্সিতে রস বানিয়ে নিন। মুখের দুর্গন্ধের সমস্যা দূর হওয়া পর্যন্ত এই রস দিনে এক বার করে খেতে হবে।

অল্প করে খাবার মুখে নিয়ে ভাল করে চিবিয়ে তবেই খাবেন। পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খান।

পুদিনা পাতা- পুদিনাকে প্রাকৃতিক ‘মাউথ ফ্রেশনার’ বলা হয়। রোজ নিয়ম করে ২-৩ টে পুদিনা পাতা চিবিয়ে খান। মুখে দুর্গন্ধর সমস্যা পালাবে!

এক কাপ জলতে দুই চা-চামচ বেকিং সোডা, আট-নয়টি পিপারমিন্ট-পাতা ও দুই চামচ চা-পাতার তেল। উপাদানগুলো ভালো করে মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।

দুই চা-চামচ অ্যাপল সিডার ভিনেগার এক কাপ লবণজল ও ভ্যানিলা এসেনশিয়াল অয়েল একটি বাটিতে মেশান। এটি বোতলে রেখে দিতে পারেন। এ মিশ্রণ ব্যবহার করে নিয়মিত মুখগহ্বর পরিষ্কার করতে পারেন।

মুখের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া থেকে দূরে করতে নিমের মাজন ব্যবহার করতে পারেন। বহুকাল আগে থেকেই মুখের সুরক্ষায় প্রাকৃতিক প্রতিষেধক হিসেবে নিম ব্যবহার হয়ে আসছে। নিম দাঁতের গোড়া শক্ত করে।

বেশি ঝামেলায় যারা যেতে চান না, তারা হালকা গরম জলতে এক চামচ লবণ মিশিয়ে তা কুলি করতে পারেন। এতে মুখের দুর্গন্ধ দূর হবে।

এলাচ মুখে রেখে দিন। দেখবেন অল্প সময়ের মধ্যেই দুর্গন্ধ একেবারে কমে যাবে।

এক চামচ মেথি বীজ নিয়ে পরিমাণমতো জলর সঙ্গে মিশিয়ে চুলায় ফোটান। তার পর বীজগুলো ছেঁকে নিয়ে সেই জল চায়ের মতো পান করুন। কয়েক দিন এমনটি করলে দেখবেন মুখের গন্ধ কমে গেছে।

মুখের ভেতরে তৈরি হওয়া জীবাণু মেরে ফলতে দারুচিনির কোনো বিকল্প নেই। তাই মুখ থেকে গন্ধ বেরোলেই এক চামচ দারুচিনির পাউডারের সঙ্গে পরিমাণমতো জল মিশিয়ে গরম করে নিন। তার পর সেই জল ছেঁকে নিয়ে কুলকুচি করুণ। দেখবেন গন্ধ চলে যাবে।