April 13, 2024 | 1:47 AM

শীতকালে সাধারণত আবহাওয়া অনেকটা শুষ্ক থাকে। এ সময় বায়ুমণ্ডলে আর্দ্রতা একেবারেই কমে যাওয়ার কারণে শরীরে থাকা বিভিন্ন ব্যাক্টেরিয়াতেও অনেকটা পরিবর্তন চলে আসে। আর এই শুষ্কতার কারণেই শীতকালে বিভিন্ন ত্বকের রোগ বা চর্মরোগ বেশি দেখা দিতে পারে।

আর এ সময়টায় নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে এক সাক্ষাৎকারে স্বাস্থ্য পরামর্শ দিয়েছেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক এবং কনসালট্যান্ট ও কসমেটিক সার্জন ডা. জাহেদ পারভেজ বড়ভূইয়া।

শীতকালে বিভিন্ন চর্মরোগের সমস্যা বেশি দেখা দেয়?
শীতকালে বিভিন্ন চর্মরোগের সমস্যা বেশি দেখা দিতে পারে। শীতকালে সাধারণত আবহাওয়া অনেকটা শুষ্ক থাকে। এ সময় বায়ুমণ্ডলে আর্দ্রতা একেবারেই কমে যায়। যার কারণে শরীরে থাকা বিভিন্ন ব্যাক্টেরিয়াতেও যেগুলো আমাদের ত্বকে থাকে সেগুলোতে একটু পরিবর্তন চলে আসে। আর এই শুষ্কতার কারণেই শীতকালে বিভিন্ন ত্বকের রোগ বা চর্মরোগ বেশি দেখা দিতে পারে।

এ সময় বাচ্চাদের শুষ্ক ত্বক যাদের তাদের এ সমস্যাটি আরও প্রকট আকারে দেখা দিতে পারে। এটি হলে ত্বক চুলকাতে চুলকাতে চামড়া একদম ফেটে যেতে পারে। আর এমনটি হয়ে থাকলে বাইরে থেকে ব্যাক্টেরিয়া বা ফাঙ্গাশ আক্রমণ করে সহজেই চর্মরোগ শরীরে বাসা বাধতে পারে।

এ ছাড়া শীতকালে অনেকেই কড়া গরম জল দিয়ে গোসল করেন বা দিনে একাধিকবার গরম জল দিয়ে গোসল করে থাকেন। অতিরিক্ত গরম জল দিয়ে বারবার গোসল করলে ত্বকের প্রাকৃতিক ময়েশ্চার যেটি থাকে, সেটি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং অনেক কমে যায়। এ কারণে ত্বক আরও বেশি শুষ্ক হয়ে গিয়ে বিভিন্ন ছত্রাকজনিত চর্মরোগ দেখা দিতে পারে।

এ ক্ষেত্রে পরামর্শ হবে দিনে একবার বা ২৪ ঘণ্টায় একবার গোসল করলেই যথেষ্ট।

কী কী ধরনের চর্মরোগ শীতকালে বেশি দেখা দেয়?
বর্তমানে শীতকালে সবচেয়ে বেশি দুই ধরনের চর্মরোগ বেশি দেখা দিয়ে থাকে। একটি হচ্ছে দাউদ আর আরেকটি স্কেবিস বা পাচড়া।

দাউদ: দাউদ সব শরীরে হতে পারে। আবার মাথায়, মুখের ত্বকে, হাতে ও নখেও দাউদ হতে পারে। এক সময় দাউদের চিকিৎসা পদ্ধতি সহজ হলেও এটি বর্তমান সময়ে অনেকটা জটিল হয়ে গেছে। এর কারণ হচ্ছে— যখন দাউদের চিকিৎসায় একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ওষুধ দেওয়া হয়, তখন অনেকেই এমনটি করেন যে, অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেই ওষুধ খাওয়া
ছেড়ে দেন। ফলে শরীরের ভেতরে ভেতরে রোগটি সুপ্ত অবস্থায় থেকে যায় এবং তার সংস্পর্শে কেউ এলে তার মাঝেও এটি ছড়িয়ে যেতে পারে।

দাউদ গরমকালেও হতে পারে আর শীতকালে এটি বেশি দেখা দিচ্ছে। আর এটি খুব বেশি ছোঁয়াচে হওয়ার কারণে এতে আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে কেই এলে তারও হতে পারে।

পরামর্শ: দাউদ হলে চিকিৎসকের পরমর্শ নিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে। এখন এ সমস্যাটির জন্য ভরিকোনাজল ও পোসাকোনাজল ওষুধ দুটি ভালো কাজ করছে।

স্কেবিস বা পাচড়া: স্কেবিস বা পাচড়া রোগটি একটি মাইক্রোস্কোপিক পোকার কারণে হয়ে থাকে। অনেকটা কচ্ছপের মতো দেখতে অনেক ছোট একটি মাইক্রোস্কোপিক পোকা এটির জন্য দায়ী। এটি খুব সহজেই মানুষের চামড়া বা ত্বকে আক্রমণ করে। আর রাতে যখন মানুষের শরীরের তাপমাত্রা বাড়ে, তখন পোকাগুলো চলাচল করে আর এ কারণে চুলকানি বেশি হয়।

এটি মূলত আঙুলের ফাঁকে, কুনই, কব্জি, নাভি, স্তন, দুই পায়ের চিপা— এমনকি এটি প্রসাবের রাস্তাতেও হতে পারে। স্কেবিস হলে সেটি চুলকাতে অনেক আরাম লাগে। যার কারণে এটি হওয়ার শুরুতেই অনেকে গুরুত্ব দেন না। ফলে পুরো শরীরেই এটি ছড়িয়ে পড়তে পারে।

পরামর্শ: একজনের স্কেবিস হলে পরিবারের সবারই এটির চিকিৎসা নেওয়া উচিত। আর এ রোগটির ক্ষেত্রে যত বেশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা যাবে এ সমস্যা থেকে ততই বেশি সুরক্ষিত থাকা যাবে। সমস্যাটি দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। আর এ সমস্যাটির ক্ষেত্রে পারমিথ্রিন লোসন বা ক্রিম গলা থেকে পায়ের তলা পর্যন্ত একদিন ব্যবহার করে পরের দিন ব্যবহার করা সব কাপড় ও বিছানার চাদরসহ সব ধুয়ে দিতে হবে। লেপ বা কম্বল ব্যবহার করা হলে সেটি নিয়মিত কয়েকদিন সেটি বাইরে রোদে দিতে হবে।

স্কেবিস বাচ্চাদের ক্ষেত্রে অনেকটাই ভয়াবহ হতে পারে। দীর্ঘদিন এটির কোনো চিকিৎসা না করা হলে সেটি কিডনির সমস্যা পর্যন্ত হতে পারে।